অনলাইন আয়ের কিছু ভুল ধারনা


ইন্টারনেট আবিস্কারের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রযুক্তিগত যত উন্নয়ন হয়েছেহচ্ছে এবং সামনেও হবে -শুধুমাত্র এর ভাল দিকটির ব্যবহারের কারণে কারণ প্রতিটি আবিষ্কারের ভাল এবং মন্দ দুটি দিক আছে সেই ভাল মন্দের ধারাবাহিকতা ইন্টারনেটও হাঁটছেঅন্যান্য দেশের সাথে আমাদের দেশেও ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যতিক্রম নয় তবে লক্ষণীয় বিষয়বিশেষ করে আমাদের দেশে গত কয়েক বছরে প্রায়  গুনেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে এটাকে সাধুবাদ জানাতেই হবে কারণপ্রযুক্তি পণ্যের অপ্রতুলতারধীর গতি  উচ্চ মূল্যের ইন্টারনেট এবং ইলেক্ট্রিসিটি এর বাঁধার মধ্যে থেকেই আমাদের দেশের তরুণরা নিজ চেষ্টায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নিজেদের এরপরেও আমরা সফল হচ্ছি কিন্তু… !

বর্তমান সময়ে আমরা বা আমাদের তরুণ সমাজ যেভাবে ইন্টারনেটের সাথে মিশছে তাতে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে গড়ে খুব বেশি হলে ২০-৩০ জন আসছেন সময়ের সাথে নিজেদের যোগ্যতা অর্জন করে ভাল কিছু করেজেনে এবং নিজের প্রফেশনাল ক্যারিয়ারের সাথে সমন্বয় রেখে। আর বাকিরা আসছেন অপরিণত মস্তিষ্ক নিয়ে “ইন্টারনেটে আয়” নামক সোনার হরিণ খুঁজতে। হয়তো অনেকের মনে প্রশ্ন আসবে। সবাইতো করে এতে নতুন করে প্রবলেম কিহ্যাঁপ্রবলেম অবশ্যই আছে। কারণঅপরিণত জ্ঞান নিয়ে যত আয়ের পিছনে ছুটবে তাঁর ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য সেটা হবে অনেক “বড় ভুল”! আবারো বলবেন কেন ভুলহ্যাঁঅবশ্যই “বড় ভুল”! কারণ,
 আপনি অপরিণত জ্ঞান নিয়ে মার্কেটপ্লেসে চলবেনসেখানে আপনি যা চাইবেন সেটা করতে পারবেন না। ভুল বসত যদি কোন কাজ পেয়েও জানতবে সেটা ভাল মত না জানার কারণ প্রপার্লি সাবমিট করতে পারবেন না। ফলে একদিকে নিজের ক্ষতি অন্যদিকে দেশের রেপুটেশন খারাপ করলেন। আর অনেক প্রবলেমই আপনি পরবেন। সেগুলো নিয়ে এখানে আলোচনা করবো না কারণ আমি শুধু টেকনিক্যালি আলোচনা করবো কিভাবে একজন নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে আয়ের পিছনে ছুটবেন। এবং অবশ্যই সেটা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে। তো চলুন মূল আলোচনায়

কম্পিউটারের সঠিক ব্যবহার শিখুন:

আমাদের মধ্যে অনেকেইবলতে গেলে প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি কম্পিউটার ইউজার আছেন যাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই কম্পিউটার সম্পর্কে। তাঁদের কম্পিউটারের উপরে কোন সার্টিফিকেট কোর্স করা নেই। আমি বলছি না এটা খারাপ কিছু। অবশ্যই বাহবা পাবার যোগ্য। বলা যায়এর-ওর দেখে বিশেষ করে বন্ধুদের দেখে কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এভাবেই একসময় নিজের কাছে কম্পিউটার চলে আসে। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে না শিখেন কিন্তু আপনাকেতো মান সম্পন্নভাবে জানতে হবেতাই নয় কি। নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছিআমার পরিচিত এমন অনেকেই আছেন যারা কম্পিউটারের এক্সপার্ট তবেএমএস ওয়ার্ড অ্যাপ্লিকেশান সফটওয়্যারে বিজয় বাংলা এবং ইংরেজি টাইপ করতে পারেন না। বিজয় বাংলা এবং ইংরেজি কেন বলছি সেটা অবশ্যই বলে দিতে হবে না আমাকে। অথচ তিনি এক্সপার্ট!!! কম্পিউটারে বিজয় বাংলা এবং ইংরেজি টাইপ করতে না পারার কারণে নিজের সামান্য নোট তাকে অন্যকে নিয়ে করায় নিতে হয়। তাহলেআপনার কম্পিউটার জ্ঞানের শুরুটাই তো ঠিক মত হল না!! আপনি যদি লিখা লিখি করে আয় করতে চান পারবেন?

ইন্টারনেটের ব্যবহার:

বর্তমান মডার্ন যুগে সবাই ইন্টারনেট চালায়। তরুণ সমাজকে ইন্টারনেটে আকৃষ্ট করার মূল জিনিসটাই হচ্ছে ফেসবুকভুল বললাম কিযাদের পিসি নাই তাঁরা দিব্বি মোবাইল ফোন নিয়ে ফেবু চালায়। আহ কি শান্তিকিন্তুযারা পিসি ইউজ করেন তাঁরা শুধু ফেসবুক নিয়েই ক্ষান্ত। এই টাইপ এর তরুণদেরই ইন্টারনেটে আয় করার ঝোঁক বেশি। ভালইখারাপ কিকিন্তুতাঁদের একবার বলুনআপনাকে একটু ডকুমেন্ট এটাচ করে মেইল করতে। বেশির ভাগই পারবে না!!! এটাচতো দূরের কথা তাঁরা কখনও মেইল ইনবক্স খুলে দেখে না। বিশ্বাস হয় নাআপনার পাশে এমন টাইপ এর কাউকে পেলে ট্রাই করে দেখুনপ্রমাণ মিলবে। এবার যদি বলেনইন্টারনেট থেকে কোন কিছু খুঁজে(Search) দিতে। অনেকেই “গুগল”-কে বলবে “গুগলি” বলতে। এরপরও সার্চ করতে দিয়ে আমতা আমতা করবে। 

আচ্ছা ধরুনআপনি পিসি আর নেট কানেকশন হাতে পেয়েছেন  মাস হল। এর মধ্যেই আয় করবেন বলে বদ্ধ পরিকর হলেন। ধরুন আপনি ওয়েব রিসার্চের কাজে বিড দিলেন। ভাগ্যক্রমে কাজও পেলেন (মনে রাখবেনআপনি পুঙ্খানুপুঙ্খ কাজ না জানলে অভিজ্ঞ বায়ার থেকে কাজ কোন দিনও পাবেন না।এবার বুঝতে পারছেন না কিভাবে কাজটি করবেন। আপনার দৌড়ানোর কাজ শুরু। এবার জ্বালাতন করবেন এরে-ওরে। ভাই কিভাবে কাজ করবোবায়ারের কথা বুঝি নাই আর অনেক কিছুই

আমার কথা গুলো খারাপ শুনালে কিচ্ছু বলার নাই আমারশুধু মনে রাখবেন। আপনি যাকে ডিস্টার্ব করবেন সেও কিন্তু একজন ইন্ডিপেনডেন্ট ফ্রীলান্সার। আপনার অক্ষমতার জন্য কেন সে আপনাকে সময় দিবেআপনাকে তো কাজ শিখতে কেউ মানা করে নাই। তাহলে কেন কাজ না শিখে কাজ নিয়ে অন্যকে জ্বালাবেন?

ইমেইলমেসেঞ্জার এর ব্যবহার শিখুন:

উপরে ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে বলেছি। দেখুনআপনি ফ্রীলান্সিং করবেন কিন্তু ইমেইলমেসেঞ্জার এর সঠিক ব্যবহার জানবেন না তাহলে কিভাবে বায়ারের সাথে যোগাযোগ রাখবেন। ফ্রীলান্সিং জগতে ইমেইল এবং মেসেঞ্জার এমন ২টি পথ যেগুলো ব্যবহার না করতে পারলে আপনি কখনও বায়ার ধরতে পাবেন না। তাই আমি রিকমেন্ড করবো যারা এখনও বিগেনার আছেনইমেইল করাইমেইল  ফাইল আটাছ করা। ইয়াহুস্কাইপজিটক মেসেঞ্জার এর ব্যবহার শিখুন। নিজে না বুঝলে কিভাবে আসবের ইউজ করতে হয় নেটে সার্চ দিন “How to use Yahoo/ Gtalk/ Skype messenger” লিখে। হাজার হাজার অডিওভিডিও টিউটোরিয়াল পাবেন। দেখুননেটে এসব সার্চ করতে হলে কিন্তুই আপনাকে অবশ্যই “ইন্টারনেটের ব্যবহার” জানতে হবে

ধৈর্য ধারণ করুন:

ধৈর্যঅধ্যবসায় এবং সময় এসব কিছু ফ্রীলান্সিং এর পূর্বশর্ত। এই গুনগুলো আপনার মাঝে না থাকলে বা না আনতে পারলে আপনার জন্য ফ্রীলান্সিং নয়। কারণআপনি চাইলেই একদিনেই একাউন্ট সাইন-আপ করেই কাজ পাবেন না। নিজে বুঝুন আগে কোথায় কি করতে হবেনা বুঝলে ফ্রীলান্সিং নিয়ে অনেক গ্রুপ-ফোরাম এবং ফেসবুক পেজ আছে সেখানে জয়েন করুন। আপনাদের প্রবলেম গুলো বলুন। কেউ না কেউ অবশ্যই হেল্প করবে। 

তবে মনে রাখবেন। কোন সল্যুশন পেতে অস্থির হবেন না। আপনার প্রবলেম এর সল্যুশন সাথে সাথেই পাবেন এমনটা আশা করা বোকামি। আমি এখানে আমার নিজের  পেজ এবং ব্লগ এর লিঙ্ক দিয়েছি। আপনারা নির্দ্বিধায় জয়েন করতে পারেন। সাধ্যমত সহায়তা করতে চেষ্টা করবো। 

অভিজ্ঞদের সাথে আলোচনা করুন:

উপরে বলেছিলাম আপনি যাকে ডিস্টার্ব করবেন সেও কিন্তু একজন ইন্ডিপেনডেন্ট ফ্রীলান্সার। আপনার অক্ষমতার জন্য কেন সে আপনাকে সময় দিবেআপনাকে তো কাজ শিখতে কেউ মানা করে নাই। তাহলে কেন কাজ না শিখে কাজ নিয়ে অন্যকে জ্বালাবেন?” আসলে বেপারটা খারাপ শুনালেও বেপারটা এমনআপনি নতুন সেটা একজন অভিজ্ঞ ফ্রীলান্সার এর সাথে কথা বললেই তিনি বুঝবেন। তার সাথে আপনার সকল প্রবলেম গুলো আলোচনা করুন। তবে হ্যাঁঅবশ্যই তার অবসর সময়ে। তার থেকে জেনে নিনতিনি কখন অবসর থাকেন। নয়তোতাকে ইমেইল করুন না আপনার সব প্রশ্ন গুলো। তিনি অবশ্যই আপনাকে সদুত্তর দিবেন যতদ্রুত সম্ভব। একটা কথা মনে রাখবেন বেশিরভাগ ফ্রীলান্সাররা মুক্ত মনের অধিকারী। তারা চান অন্যকে সহায়তা করতে। কিন্তুবিগেনারদের তাড়াহুড়োর কারণে তারা এখন দিকনির্দেশনা দিতে ভয় পান। কোন মতেই অভিজ্ঞদের সাথে দীর্ঘ সময় আলোচনায় যাবেন না। এতেআপনারই লস হবে। কারণকথা পিঠে অনেক কিছুই আলোচনা বহির্ভূত বিষয় চলে আসবে। এতে আপনি যে উদ্দেশে তার কাছে আসলেন সেটার কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটবে। 


 ফ্রীলান্স মার্কেটপ্লেসআপনার কাজগুলো চিনুন:



অভিজ্ঞদের সাথে আলোচনার একটা বিষয় এটা হতে পারে। আপনি কিভাবে মার্কেট প্লেস চিনবেন। কোনটা আপনার জন্য ভাল হবে। কি কাজ আপনি করতে পারবেন আসব নিয়ে। লক্ষ করুনসারা বিশ্বে অনেক রেপুটেড ফ্রীলান্স সাইট আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: oDesk.com, Freelancer.com, eLance.com,, vWorker.com ইত্যাদি।

অর্থ উত্তোলন পদ্ধতিসাইটগুলোতে কাজ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টাকা হাতে পাওয়াটা কিছুটা কষ্টকর হলেও আমাদের দেশের তরুণরা কাজ করা থেকে পিছিয়ে নেই। বর্তমানে প্রতিটি ফ্রীলান্সিং সাইট- আন্তর্জাতিক ডেবিট মাস্টার কার্ড দিয়ে অর্থ উত্তোলনের সুবিধা দেয়সাথে মানিবুকার্সপেপাল এবং ওয়েবমানি ট্রান্সফার এর মাধ্যমে সামান্য কিছু চার্জ দিয়ে নগদ অর্থ দেশের ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে হাতে আনা যায়

অতঃপর আয়:

অপরের প্রতিটি স্টেপ কোন না কোন ভাবে আপনাকে মানতেই হবে। ধৈর্য নিয়ে নিয়ে কিছু পথ পাড়ি দিতে পারলেও সপ্তম পথে এসে আপনাকে এর পথ হাতড়াতে হবেনা। আপনাকে টাকা খুঁজতে হবেনাটাকা আপনাকে খুঁজবে। মার্কেটপ্লেস গুলো চিনার সাথে সাথে আপনার পছন্দের কাজ শিখুন। যে কাজে আপনি কমফোর্ট পাবেন সেই কাজ করুন। অন্যের বুঝায় দেয়া কাজে যদি নিজে মন থেকে পছন্দ করতে না পারেন তবে ভুলেও সেই কাজে পা বাড়াবেন বা। আপনি যে কাজটি পছন্দ করবেনসেটি যদি ছোট কাজও হয় তবে সেটি নিয়েই শুরু করুন না। কাজ করবেনআয় করবেন সাথে নিজেকে প্রতিনিয়তই ডেভেলপ করবেন প্রযুক্তির সাথে। তাহলে আপনার ফ্রীলান্স জগত অনেক সহজ হবে

এখানে আমি “অতঃপর আয়” শিরোনাম নিয়ে প্যারা শুরু করছি অথচ আয় নিয়ে তেমন কিছুই বলব না। কারণআমিতো অনেক কিছুই বললাম তাই নাএবার আয়ের দেখাটা নাহয় নিজেই চেষ্টা করেই অর্জন করুন। 

ভুল হলে ক্ষমা করবেন ।   
আজ এই পর্যন্ত !

সবাই ভাল থাকুনসুস্থ থাকুন !


  


No comments:

Post a Comment